কলমে – শ্যামাপদ প্রামাণিক
হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবের অন্ত নেই। প্রতি মাসেই উৎসব ও বিশেষ দেব দেবীর পুজো আছেই।
হিন্দুরা এই মাঘ বা ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবের বিশেষ পুজো ও শিবরাত্রি ব্রত উদযাপন করেন। এই শিবরাত্রি ব্রত উপলক্ষে ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকে ঘটা করে বিভিন্ন মন্দিরে ও সর্বজনীন শিব পুজো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও খড়্গপুরের রামেশ্বর শিবের মন্দিরে বিশেষ পুজো হয়। দাসপুর বেলতলায় ২৫ বছরের বেশি শিব দুর্গা পুজো ও মেলা চলেছে। এবারে ও মহাসমারোহে শিব দুর্গা পূজা ও মেলা হচ্ছে। অখন্ড মেদিনীপুর জেলা ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শিবের মন্দির আছে। ভিন্ন ভিন্ন শিবের নামে মন্দিরগুলি গড়ে উঠেছে। দাসপুরের লাওদায় শিবের নাম ভূতনাথ। ঘাটালে শিবপুরে শিবের নাম বটেশ্বর। খড়্গপুরের শিবের নাম রামেশ্বর। এরকম বিভিন্ন আরো নামে শিবের মন্দির ও শিব চিহ্নিত।
শিবরাত্রি কি ও কেন? কারা শিবরাত্রি করে:
শিবরাত্রি- শিব ও রাত্রি।শিবের জন্য যে রাত্রি তাকেই শিবরাত্রি বলা হয়। এদিনটি লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারী ও শিব ভক্তদের কাছে পরম পবিত্র একটি দিন। এই দিন হিন্দু বিবাহিত ও অবিবাহিত রমণীরা শিববের ব্রত করে শিব কে বিশেষভাবে পুজো দেয়। সারারাত জেগে তারা এই প্রথম পালন করে। কথিত আছে এই দিন এই শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে নাকি শিব বিশাল সন্তুষ্ট হন। সন্তুষ্ট হয়ে যারা ব্রত করেন তাদের মনের বাসনা পূর্ণ করেন তাই হিন্দুরা এই শিবরাত্রি ব্রত পালন করে থাকে। অনেকে আবার স্বামীর মঙ্গল কামনায় এই ব্রত করে ও থাকে। আবার কেউ কেউ শক্তির উপাসক হিসেবে শিবের পুজো ও শিব রাত্রি ব্রত করেন। তান্ত্রিকরা তাদের সিদ্ধি লাভের জন্য এদিন বিশেষ পুজো করে শিবের সাধনা করে।
শিবরাত্রির ও শিবপুজোর নানা নিয়ম :
এদিন রাত্রিতে শিবের মন্দিরে চার বছরে চারবার পুজো হয়। পুজোর নিয়ম ওআচার শিব রাত্রির আগে দিন হিন্দুরা রমণীদের যারা এই ব্রত করেন তাদের নিরামিষ ভোজন করতে হয়। ওইদিন সারারাত জেগে ১০৮বার শিব মন্ত্র উচ্চারণ, শিবের কথা ও কাহিনী আলোচনা ও ভক্তিগীতি গাইতে হয়।
মহাদেব শিবকে বা শিবলিঙ্গকে দুধ, দই মধু দিয়ে চার প্রহরে চারবার এইসব দিয়ে স্নান করানোর রীতি। বেলপাতা, ধুতরা, নীলকন্ঠ ফুল, অপরাজিতা ফুল দিয়ে শিবের পুজো দিতে হয়। ৮ও ৯এর দশকে যখন টিভির দৌরাত্ম্য বা এত বেশি দাপট ছিল না তখন শিবরাত্রি উপলক্ষে সিনেমা যাত্রা ও ভিডিও শো সারারাত্রি ব্যাপী হত। এই অনুষ্ঠানে শিব রাত্রির ব্রত করা রমনীরা বিপুলভাবে দেখার জন্য ভিড় করত। সময় পরিবর্তন হয়েছে । তাই বর্তমানে এসব বন্ধ । তারা টিভি ও মোবাইলে নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখে । সারারাত জেগে বাড়িতেই কেউ আবার শিব মন্দিরে রাত্রিযাপন করে শিবরাত্রি ব্রত পালন করে।
পুরানে শিবরাত্রি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিতর্ক:
শিবরাত্রি ব্রত উদযাপন করা নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন রকম কাহিনী আছে। হিন্দু মহাপুরাণ শিব পুরাণ থেকে জানা গেছে ভগবান শিবের এদিন জন্মদিন। এই দিনেই আবার শিব ও দুর্গার বিয়ে হয়েছিল। তাই বলা যায় শিব ও শক্তি তথা পুরুষ ও আদি শক্তির অপূর্ব মিলন ঘটে।কথিত আছে এদিন শিব লিঙ্গ রূপে পৃথিবীতে প্রকট রূপে আত্মপ্রকাশ এবং শিব সৃষ্টি প্রলয় তাণ্ডব নৃত্য করেছিল। আবার কোন পুরাণে শিব তার প্রতীক লিঙ্গ শিব লিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের মুক্তির পথ দেখায় এদিন। শিবরাত্রি নিয়ে বিভিন্ন পুরাণের ভিন্ন ভিন্ন মত উল্লেখ থাকলেও হিন্দু রমণীরা এসবের গুরুত্ব না দিয়ে গভীর নিষ্ঠা সহকারে নিজেদের মঙ্গল কামনা শিবরাত্রি ব্রত উদযাপন করে।