দেবতাদের দর্প চূর্ণ করতে আবির্ভূত হন দেবী জগদ্ধাত্রী, জেনে নিন কি রয়েছে পুরাণে
নিজস্ব সংবাদদাতা: জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার ঠিক একমাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে। কাত্যায়নীতন্ত্র–এ কার্তিকী শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর ও হুগলি জেলা র আলোর শহর চন্দননগরে এই উত্সব জগদ্বিখ্যাত। বহু মানুষ এই সময় জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভা দেখতে চন্দননগরে যান। কিন্তু জগদ্ধাত্রী কী দুর্গারই আর এক রূপ? দেবী জগদ্ধাত্রী সম্পর্কে হিন্দু পুরাণ কী বলছে, তা একটু দেখে নেওয়া যাক।
‘জয় সর্বগত দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমোহস্তুতে’! জগদ্ধাত্রীও নয়, দুর্গাও নয়, দুইয়ে মিলে দেবীর প্রকাশ। এই দেবী জগদ্ধাত্রী সিংহের পিঠে আসীন, নানা অলঙ্কারে ভূষিতা ও নাগরূপ যজ্ঞোপবীতধারিণী। দেবীর দুই বাম হাতে শঙ্খ ও শার্ঙ্গধনু এবং দুই ডান হাতে চক্র ও পঞ্চবাণ। উপনিষদে তাঁর নামটি উমা হৈমবতী বলে বর্ণনা করা আছে।
পুরাণ মতে, মহিষাসুর নয়, দেবতাদের দম্ভ বিনাশেই আবির্ভূত হয়েছিলেন জগদ্ধাত্রী। এই পুজোর ইতিহাসের পাতায় রয়েছে পুরুষতন্ত্রের ছোঁয়া। মহিষাসুর বধের পর অত্যধিক উল্লসিত হয়ে ওঠেন দেবতারা। তাঁরা ভেবেছিলেন, দুর্গা যেহেতু তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই অসুর বধ হয়েছে তাঁদেরই যুগ্ম শক্তিতে, ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষা করতে কেবল ওই নারীদেহটির আবশ্যিকতা।
তাঁদের ওই গর্ব দেখে পরমেশ্বরী দেবী দেবতাদের শক্তি পরীক্ষা করতে একটি তৃণখণ্ড আড়াল থেকে ছুড়ে দেন। ইন্দ্র বজ্র দিয়ে সেই তৃণটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন, অগ্নি সেই তৃণ দহন করতে পারলেন না, বায়ু ব্যর্থ হলেন তা উড়িয়ে নিয়ে যেতে, বরুণের শক্তি সেই তৃণকে জলস্রোতে প্লাবিত করতে পারল না। দেবতাদের এই দুরবস্থা দেখে তখন তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হন পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী। এভাবে তিনি দেবতাদের বুঝিয়ে দিলেন যে তিনিই এই জগতের ধারিণী শক্তি।
দেবী জগদ্ধাত্রী ব্রহ্মময়ী; তিনি পরমা যোগিনী। মহাযোগবলেই ব্রহ্মময়ী ধরে আছেন এই নিখিল বিশ্বসংসারকে। এই জগদ্ধারণই জগদ্ধাত্রীর পরম তপস্যা – তাঁর নিত্য লীলা, তাঁর নিত্য খেলা। জননীরূপে তিনিই বিশ্বপ্রসূতি, আবার ধাত্রীরূপে তিনিই বিশ্বধাত্রী। বিশ্বসার তন্ত্র মতে দেবীর উভয়ে ধ্যান মন্ত্রেই পূজা বিধি এক।
বিভিন্ন পৌরাণিক সুত্রে দেবী দুর্গাকে দূর্বা-শ্যামা বলা হয়েছে। আবার চন্ডিতে উল্লেখ আছে মহিষাসুর এক মহাহস্তি রুপে দেবীকে আক্রমণ করে এবং দেবী তার মুণ্ড চ্ছেদ করেন, তখন সে এক পুরুষ রূপে অবতীর্ণ হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, মহালক্ষ্মী দেবী তাকে তির বিদ্ধ করেন। অস্ত্র হিসেবে তির-ধনুক দেবীর এই মূর্তিতে বর্তমান। সেই দেবীকে পুরাণে জগদ্ধাত্রী নামে পরিচিতি লাভ করে। জগদ্ধাত্রী অর্থাৎ জগতকে যিনি ধারণ করেন।