অফবিটসাহিত্য ও সংস্কৃতি

দোল উৎসবের ইতিহাস ও আজ সর্বজনীন উৎসবে রূপান্তরিত -✍️শ্যামাপদ প্রামাণিক

দোল উৎসবের ইতিহাস ও আজ সর্বজনীন উৎসবে রূপান্তরিত

                 কলমে – শ্যামাপদ প্রামাণিক

প্রেম প্রীতি মিলনের উৎসব ও রঙের উৎসব দোল বা হোলি। ভারতবর্ষের যত সম্প্রদায় আছে। বেশিরভাগ সম্প্রদায় দোল বা রঙের উৎসবে মেতে উঠে। নিজে নানা রঙ মাখে প্রিয় কে মাখায় লাল, নীল,গোলাপি আরো অনেক রঙে। বন্ধু বান্ধব তাদের পুরনো মনোমালিন্য ভুলে রঙের উৎসবে পারস্পরিক মিলে যায়। তাদের পুরানো সম্পর্কে নতুন সম্পর্কের হাওয়া লাগে। ভালোবাসার সম্পর্কে গভীরতা বাড়ে। উৎসব

মিলনমেলায় রং লাগে। এই ফাল্গুন মাসের দোল বা হোলি উৎসবের দিনটি ঐতিহ্য পরম্পরা ঐক্যের মেলবন্ধনে অন্যতম সাংস্কৃতিক উৎসব।

হোলি শব্দের উৎপত্তি হোলিকা থেকে। এই হোলি উৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাচীন এক উৎসব। কালিদাসের রচনা ও হর্ষবর্ধনের রত্নাবলীতে এই হোলি শব্দের প্রাচীনত্ব বিষয়ের উল্লেখ আছে।

মাধব মালঞ্চ নাটকে এই উৎসবের বর্ণনা আছে।বাৎসায়নের কামসুত্রে এই উৎসবের কথা পাওয়া যায়। ইংরেজরা এই উৎসবকে রোম্যান্স উৎসব বলে মনে করত।

মধ্যযুগের ইতিহাস থেকে জানা যায়আকবর যে বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করেন তাতে বাংলার তথা বাঙালি ১৪টি লোক উৎসব এর মধ্যে এই দোল উৎসব কে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তাই এই দোল উৎসব ঐতিহ্যবাহী এক প্রাচীন উৎসবের অন্যতম উৎসব।

দ্বাপর যুগে শ্রী কৃষ্ণ রাধা পুষ্পরেণীর মাধ্যমে দোল উৎসব করত। পরবর্তীকালে এই পুষ্পরেণু বিবর্তিত হয়ে রঙীন এক বিশেষ ধরণের আবির রূপান্তরিত হয়েছে। এই আবির নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ও বৃন্দাবনে রাধা গোপীনীদের মাখিয়ে ছিল।‌ সেই আবির বর্তমানে আট থেকে আশি বয়সীরা নিজে মাখে ও অন্যকে মাখিয়ে আনন্দ করে। দোল উৎসব বা হোলি উৎসব পালন করে।

যদিও নেট ও পুরাণ থেকে জানা গিয়েছে, এই দোল উৎসব বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উৎসব। পুরাণের এই নিয়ে বিতর্ক আছে। যেখানে বেশিরভাগ সম্প্রদায় এই উৎসবে মাতোয়ারা হয়। সেখানে একটি সম্প্রদায়ের বলা সঠিক নয়। এই উৎসব আজ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত।

দোল উৎসবের উৎপত্তি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে দোল পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ বহু গোপিনী ও রাধিকাকে নিয়ে রঙ ও আবির খেলায় মেতে ওঠে। এই থেকেই দোল উৎসবের সূচনা বা উৎপত্তি।

দোল উৎসবের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নামে পালিত হয়। উত্তর ভারতে হোলি উৎসব, বাংলায় দোল উৎসব শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব হিসেবে পালিত হয়। আবার এই দোল উৎসবের ইতিহাস থেকে জানা যায় ভারতবর্ষের প্রাচীন আরিয়ান জাতির হাতে এই উৎসবের সূচনা। খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর পূর্বের ভাস্কর্যে এই উৎসবের উল্লেখ আছে। তাই এই উৎসব যে অতি প্রাচীনকালের তা বলাই বাহুল্য।

দোল উৎসবের দিনে মথুরা বৃন্দাবনে ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ,ঘাটাল মহকুমা ও পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শ্রীকৃষ্ণ রাধিকার সাড়ম্বরে পুজো হয়। শুধু পুজো কেন। দোল বা হোলি উৎসবের দিনে হরিনাম ভক্তরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে অষ্টপ্রহর ব্যপী হরিনাম সংকীর্তন সহ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পুজো করে বিভিন্ন গ্রামে। চলচ্চিত্রের দৃশ্যে হোলি উৎসব থাকে। এই উৎসব কে আকর্ষণীয় করতে অনেক গীতিকার অসাধারণ গান রচনা করেছেন। সেই সমস্ত গান আজ কালজয়ী। ‘খেলব হোলি রং দেব না /তাই কখনও হয়/এসো এসো বাইরে এসো..” মনে না রং লাগলে এ কেমন হোলি কেমন হোলি..’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল…”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.