সাহিত্য ও সংস্কৃতি

Mahavir Jayanti : মুক্তিপথের অগ্রদূত ,কলমে – অরূপরতন মিশ্র 

মুক্তিপথের অগ্রদূত

অরূপরতন মিশ্র

 মুক্তিপথের অগ্রদূত , কলমে – অরূপরতন মিশ্র 

 

দেবভূমি ভারতের দেবতুল্য সন্তান মহাবীর বর্ধমান জৈন। এই ভারতের মাটিতে উদ্গত হয়েছিল বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলির একটি, জৈন ধর্ম। মহাবীর এই ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। আজ সেই মহাবীরের ২৬২১তম জন্মজয়ন্তী। চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে ধরাধামে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন।

 

মহাবীর জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর। তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম ছিল বর্ধমান।৫৯৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে অধুনা বিহারের বৈশালীতে তিনি রাজপরিবারে জন্মেছিলেন। তাঁর পিতা সিদ্ধার্থ এবং মাতা ত্রিশলা। ত্রিশ বছর বয়সে মহাবীর রাজসিংহাসন ত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন বেছে নন। অরণ্যে সাধনা করেন। একাত্তর বছর বয়সে তিনি মহামুক্তি লাভ করেন।

 

জৈনধর্মে তীর্থ ও তীর্থঙ্কর বলতে কী বোঝায়?

তীর্থ হল, অহিংসা এবং আত্মসংযমের মধ্য দিয়ে জন্মমৃত্যু সংসার চক্র থেকে মুক্তি। যিনি সেই গমনযোগ্য পথ দেখিয়ে দেন অর্থাৎ এাতাকে বলা হয় তীর্থঙ্কর। জৈনমতে ঋষভনাথ হলেন প্রথম তীর্থঙ্কর। পার্শ্বনাথ ২৩তম, মহাবীর কালচক্রের ২৪ তম।

মহাবীর আখ্যা কেন?

তিনি কঠোর আত্মসংযমের দ্বারা নির্ভীকতা,সত্যজ্ঞান,অহিংসা,নির্লোভতাকে লাভ করেছিলেন বলে মহাবীর সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।

জৈন শব্দটি জিন্ তথা জয় করা ধাতু থেকে এসেছে। আসক্তি, আকাঙ্ক্ষা, ক্রোধ, অহংকার হিংসা ইত্যাদি ইন্দ্রিয়জাত মন্দ আবেগগুলিকে কঠোর কৃচ্ছ্র সাধনের দ্বারা দমন করে সত্য অনন্তজ্ঞানকে অধিগত করা হল জিন আর তার পথের পথিকরা হলেন জৈন। আর তাই বোধ হয় জৈন ধর্মের প্রতীক সিংহ।

জৈন ধর্মকথাগুলি অর্ধমাগধী ভাষায় লিখিত, কিন্তু মহাবীর প্রাকৃতজনের মুখের ভাষায় উপদেশ দিতেন। জৈন ধর্মে সরাসরিভাবে ঈশ্বরের কথা বলা হয়নি, সর্বনিয়ন্তার কথা বলা নেই, পরিবর্তে আত্মোপলব্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আত্মা, জন্মান্তরবাদ, ও কর্মফলে বিশ্বাস রাখা হয়েছে। তার দর্শন পুরোপুরি ভারতীয় চিন্তা-চেতনার সঙ্গে যুক্ত।

মহাবীর পঞ্চ মহাব্রত পালনের উপদেশ দিয়েছেন :

১) অহিংসা–সর্বস্তরে তা পালন করা।

২) সত্য– আত্মশক্তিকে বৃদ্ধি করা।

৩) অচৌর্য—কোন দ্রব্য হরণ না করা

৪) অপরিগ্রহ–আসক্ত না হওয়া

৫) ব্রহ্মচর্য—আত্মসংযম পালন করা।

তার সঙ্গে সিদ্ধশীল বা ত্রিরত্ন :

১) সত্য বিশ্বাস,

২) সত্যজ্ঞান,

৩)সত্য আচরণ। এগুলি না হলে মুক্তি নেই।

মহাবীরের ধর্ম যে আমাদের জীবনে কত বেশি প্রয়োজন তা তার একটি উপদেশ থেকে উপলব্ধি করা যায়:

সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা, ও একটি বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ পেতে হলে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়কেই আত্মসংযম অভ্যাস করতে হবে। ( লর্ড মহাবীর এ্যাণ্ড হিজ টাইমস্ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত)

হে মহাবীর!হে মুক্তিপথের অগ্রদূত! তোমায় শতকোটি প্রণাম।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.