ভারতীয় রেলের মাথায় নতুন মুকুট। রেলপথে যুক্ত হচ্ছে বাংলা ও সিকিম
সেবক-রংপো রেল প্রজেক্ট প্রায় সম্পূর্ণ। ভারতীয় রেলের মাথায় নতুন মুকুট। রেলপথে যুক্ত হচ্ছে বাংলা ও সিকিম।
উত্তর কাশীর টানেল দুর্ঘটনা এখনও আমাদের স্মরণে আছে। কোনো প্রানহানী না হলেও ৪১ জন শ্রমিক টানা ১৭ দিন টানেলের মধ্যে আটকে ছিল। কিন্তু এবার রেল টানেলে ব্যাপক সাফল্যর মুখ দেখলো ভারতীয় রেল। সমস্ত রকম বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে সেবক রংপো রেল প্রকল্পে আরও একটি সাফল্য। এই রেল প্রকল্পে থাকা ৪ নম্বর টানেলের পোটাল ১ নম্বরের সফলভাবে ব্রেক থ্রু করা হল সোমবার। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে ২০ জন ইঞ্জিনিয়ার প্রায় ৪০০ জন কর্মীকে নিয়ে এই টানেলের কাজ শুরু করেন। এই টানেল প্রায় ৩৯৪৮ মিটার। অন্যদিকে, রেল সূত্রে জানা গিয়েছে ৪ নম্বর টানেলের পোটাল থেকে এডিট পর্যন্ত ২০১৬ মিটার লম্বা। জানা গিয়েছে, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এই ৪ নম্বর টানেলের কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হবে।
আরও জানা গিয়েছে এই টানেলের নির্মাণের কাজ করছে আইটিডিসি। তবে এই টানেল নির্মাণের কাজে এখনও পর্যন্ত কোনওরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর আগে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল এই রেলওয়ে প্রজেক্ট। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না-হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের একটি টানেলের ছাদ হঠাৎ ধসে পড়ে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে খবর পাওয়া যায়, সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের পাঁচ নম্বর টানেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও সেই ঘটনায় কোনও প্রাণহানি হয়নি। তবে টানেলের ছাদ খসে পড়ার কারণে সময়ের মধ্যে রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আর তারপর এই সাফল্য ৷ এমনিতেই ভূমিকম্প প্রবণ হিমালয়ের ভূমিরূপ এখনও ততটা শক্ত হয় নি। সেই পরিস্থিতিতেই নিখুঁতভাবে তৈরী হলো এই বিশাল টানেল।
এই টানেলে কর্মরত অনেকেই উত্তর কাশী টানেলে কাজ করেছেন। তারা এখন এখানে কাজ করছে। তারা অভিজ্ঞাতাও শেয়ার করেছেন। তারা বললেন, “দুর্ঘটিনা বলে আসে না। কিন্তু যে পদ্ধতিতে সুড়ঙ্গ নির্মাণ হয় তাতে এমন ঘটনা বিরল।” এই প্রকল্পে ৪৫ কিলোমিটার যাত্রাপথে ১৪টি সুড়ঙ্গপথে ৩৫কিমি সুড়ঙ্গযাত্রা করবে ভারতীয় রেল। তার কাজ জোরকদমে চলছে। দিন রাত এক করে শ্রমিকেরা কাজ করে চলেছেন। এই টানেলের ফলে বাংলার সঙ্গে সিকিমের রেল পথে সরাসরি যোগাযোগ হবে। জানা যাচ্ছে, প্রথম পর্যায় শেষে রংপো থেকে নাথুলা পৌঁছবে ট্রেনটি। সীমান্তে যাবে রসদ ও সেনাও। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তায় রয়েছে ১৪টি সুড়ঙ্গপথ।
রেলের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বলেন, টানেল -১ যেখান দিয়ে গেছে, সেই অঞ্চলের মাটি সবচেয়ে ভঙ্গুর। ফলে প্রজেক্ট -১এর ৪ কিমি টানেল তৈরী তাঁদের কাছে ছিল একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ।
রেল ইঞ্জিনিয়ারের ভাষায় এখন ‘এডিট’এর কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। কর্মরত শ্রমিক ও ভবিষ্যতে যাত্রী নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা টানেলের সঙ্গে সঙ্গে এডিট প্রস্তুত করে চলেছে। এডিট হলো, মূল টানেলের ভিতর থেকে আরও ছোট ছোট কিছু সুড়ঙ্গ পথ খোঁড়া হয় (মূলত শ্রমিকরা বিপদে পড়লে যাতে উলটো দিক দিয়ে বের হতে পারেন) সেই পথকেই ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় বলা হয় ‘এডিট’। আগামী দিনে রেল চলাচল শুরুর পরে যদি দুর্ঘটনা ঘটেও, এই পথেই গুহার ভিতর ঢুকবে অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকারী দল প্রবেশ করতে পারবে ।
সবটা মিলিয়ে বলাই চলে, কাজ প্রায় সমাপ্ত। এখন যে টুকু কাজ বাকি তা খুবই তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, নির্ধারিত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশ চিনের কথা মাথায় রেখে এই টানেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পর্যটক নয়, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনা সীমান্তে নাথুলা অবধি এভাবেই ধাপে ধাপে রেলপথ নির্মাণ করে সহজেই সেনা জওয়ান ও রসদ পৌঁছবে সীমান্তে।