চতুর্দশীর রাত উপভোগ করতে চান? এই জায়গাগুলিতে ঘুরে আসুন, দেখা মিলতে পারে তেনাদের
নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত পোহালেই কালীপুজো। আর পুজোর আগের দিনটিকে ভূত চতুর্দশী হিসেবে ধরা হয়। ছোট থেকেই প্রায় সবাই এই দিনটিকে নিয়ে কোনও না কোনও গল্প শুনেছেন। তার মধ্যে একটি গল্প হয়তো সবাই শুনেছেন, যে এই দিন অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভূতেরা ঘোরাঘুরি শুরু করে দেয়। পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু জায়গা রয়েছে বলা হয় ভূত চতুর্দশীতে ভুলেও সেখানে যাওয়া উচিত নয়। না হলে ঘাড়ে চাপতে পারে তেনাদের আত্মা। আপনি ভূতে বিশ্বাস না করলেও এই জায়গাগুলিতে গেলে আপনার গায়ে কাঁটা দেবে। কিন্তু যাঁরা ভূতপ্রেমী, মানে তেনাদের নিয়ে একটু আধটু চর্চা-টর্চা করেন, তাঁদের তো আজ সোনায় সোহাগা। আপনি যদি একটু রোমাঞ্চকর কিংবা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাহলে ভূত চতুর্দশীর দিনটি আপনার কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
বেগুনকদর(পারুলিয়া)
পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে ঝালদা এবং কোটশীলার মাঝে এই বেগুনকোদর স্টেশন। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট্ট একটা স্টেশন। চারপাশের অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে এই স্টেশন মন ভরিয়ে দেওয়ার মতো। প্রায় অর্ধশতক ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল স্টেশনটি। ট্রেন আসে যায় কিন্তু কোনও যাত্রীর দেখা মিলত না। দিনের বেলায় এই চত্বরে আসতে ভয় পেতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শোনা যায়, বহু বছর আগে একদিন মধ্যরাতে এখানে খুন হন স্টেশন মাস্টার ও তাঁর স্ত্রী। পরে স্টেশনের কাছে এক কুয়োর মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের মৃতদেহ। সেই থেকেই নাকি অশরীরী কার্যকলাপের শুরু। শোনা যায়, ওই ঘটনার পরই রাতারাতি পালিয়ে যান সব রেলকর্মী। বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশনে ট্রেন থামা। স্টেশনটা হানাবাড়িতে পরিণত হয়।
পার্কস্ট্রিট কবরখানা(কলকাতা)
গোরস্থানে সাবধান! দিনের বেলায় এই স্থান প্রেমের হলেও নাকি রাত হলেই হয়ে ওঠে ভয়াবহ। আত্মাদের ফিরে আসার অলৌকিক ঘটনা, ব্রিটিশ বিরোধীদের কান্না নাকি হাড় হিম করে তোলে। কান পাতলে নাকি আজও শোনা যায় ইংরেজদের আর্তনাদ। এখানে প্রথম কবরটি দেওয়া হয় ১৭৬৭ সালে।
রায়পুর রাজবাড়ী(বীরভূম)
বোলপুর শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইলামবাজারের কাছে রয়েছে রায়পুর গ্রাম। সেখানেই বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই রাজবাড়ী। লোকমুখে শোনা যায় এটি একটি ভুতুড়ে বাড়ি। এখানে অশরীরের দেখা মিলবে কিনা তা জানা নেই তবে এই ভগ্নপ্রায় জমিদার বাড়িটির ভিতরে আলো আঁধারের মধ্যে বেশ গা ছমছমে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। যার কারণে এই বাড়িটিতে একাধিক ভূতের ছবির শুটিং হয়েছে। সন্দ্বীপ রায় পরিচালিত ‘যেখানে ভূতের ভয়’ ছবিটির বেশ কিছু অংশের শুটিং হয়েছে এই বাড়িটিতেই।
পুতুলবাড়ী (কলকাতা)
১৭, হরচন্দ্র মল্লিক লেন, আহিরীটোলাই কলকাতার পুতুল বাড়ি নামে পরিচিত। শতাব্দীপ্রাচীন এই বাড়িটার বেশ নামডাক রয়েছে। খানিকটা নির্মাণ শৈলীর জন্য আর বাকিটা অশরীরীদের সৌজন্য। বাড়িটি তৈরি হয়েছিল উনিশ শতকে। যিনি তৈরি করেছিলেন তার ছোট্ট মেয়ে পুতুল খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তাই তিনি বিভিন্ন পাথর দিয়ে নানান পুতুলে বাড়িটি সাজিয়ে তোলেন। পরবর্তীকালে এই বাড়িটির মালিক হন কলকাতারই এক বাবু। কিন্তু তার চরিত্র একেবারেই ভালো ছিল না। তিনি অল্প বয়সী মেয়েদের উপর যৌন নির্যাতন চালাতেন। তারপর তাদেরকে মেরে পুঁতে ফেলতেন বাড়ির মধ্যেই। রাত হলেই নাকি সেই অসহায় মেয়েদের কান্নায় ভয়ানক হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ।
ডাউ হিল (কর্শিয়াং)
অনেক প্রেতকাহিনি ছড়িয়ে রয়েছে কর্শিয়াংকে ঘিরে। রহস্যময় বনাঞ্চল এটি। দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি হিল স্টেশন, যার নাম ডাউ হিল। ডাউ হিলের অরণ্যে অতীতে বহু অপ্রাকৃত মৃত্যু ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। ভারতবর্ষের সবচেয়ে রহস্যঘন স্থানগুলির মধ্যে একটি। যদিও ডাউ হিলের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু আজও। ডাও হিলের জঙ্গলের কাছেই রয়েছে একটি বয়েজ স্কুল। সেখানে প্রায়ই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার জন্য পায়ের শব্দ শোনা যায়। শীতের রাতে চিৎকারও শুনতে পাওয়া গিয়েছে মাঝে সাঝে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি(কলকাতা)
ভুতুড়ে জায়গা হিসেবে অনেকেই ন্যাশনাল লাইব্রেরির নাম মুখে আনতে ভয় পান। এটি কলকাতার একটি সুপ্রাচীন এবং অত্যন্ত বিখ্যাত গ্রন্থাগার। এছাড়াও এটি দেশের অন্যতম একটি সম্পদ। দুপুরে বইতে মনোনিবেশ করা পড়ুয়ারা ঘাড়ের কাছে নাকি একসময় নিঃশ্বাসের অনুভব পেতেন। এছাড়াও দিনে দুপুরে শোনা যেত পায়ের শব্দ। লাইব্রেরির বহু কর্মচারী নাকি ভূতের দেখা পেয়েছেন।