অফবিটসাহিত্য ও সংস্কৃতি

প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মেনে সবং এ আজ থেকে শুরু হল তুলসী চারার মেলা! উদ্যোগে সবং এবং পটাশপুর থানার বাসিন্দারা

প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মেনে সবং এ আজ থেকে শুরু হল তুলসী চারার মেলা! উদ্যোগে সবং এবং পটাশপুর থানার বাসিন্দারা

 

ভুবন মোহনকর: ১৫/০১/২০২৩: পশ্চিম মেদিনীপুর: অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন ও জনপ্রিয় গ্রামীন মেলা তুলসী চারার মেলা। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং এবং অপর পারে পটাশপুর। মাঝখানে কেলেঘাই নদী। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে নদীর পাড়ে আছে এক তুলসী মঞ্চকে কেন্দ্র করেই এই মেলা।পটাশপুর ও সবংয়ের গোকুলপুর, খাউখান্ডা, কোলন্দা গ্রাম সহ বেশ কিছু গ্রাম নিয়ে এই মেলা বসে।

 

মূলত তুলো এবং বৈষ্ণবদের খোল (মৃদঙ্গ) কেনাবেচার জন্য মেলাটি বিখ্যাত। বর্তমানে মেলাতে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ অব্দি সব কিছুই পাওয়া যায়। “মেদিনীপুর-কথা” বই থেকে জানা পটাশপুর একদা বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। পট্টবাস থেকে পাটাটা/পটাশ/পটাশপুর। বঙ্কিম মাইতির লেখা “মেদিনীপুর স্থান নাম” গ্ৰন্থ থেকে জানা যায় ১৫৫৭ সালে স্থানীয় ভূস্বামী অমর সিংহকে পরাজিত করে পীর মখদুম এলাকা দখল নেন। তিনি আধিপত্য কায়েম রাখতে রোজ কামান দাগার ব্যবস্থা করেন। কামানের শব্দ থেকে লোকের মুখেমুখে পটাশপুর হতে পারে। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্ৰামের বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী ছিলেন বাকসিদ্ধ। তার সমাধিস্থল ঘিরেই হয় তুলসী চারার মেলা।

কথিত গোকুলানন্দ গোস্বামী ছিলেন কোলন্দা গ্ৰামের জমিদার পরমানন্দ ভূঁইয়ার ভান্ডারী। জমিদারের কাজ সামলানোর সঙ্গে নিজে সাধন ভজনে ব্যাস্ত থাকতেন।জমিদার পুত্র বিপ্রদাস গোকুলানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গোকুলানন্দ কেলেঘাই নদীর চরে সাধন ভজন করতে করতে সমাধি প্রাপ্ত হন্।দেহ রক্ষার আগে বিপ্রদাস কে বলেন তাঁর সমাধির ওপর একটি তুলসী মঞ্চ গড়তে। সেই মঞ্চের গোড়ায় যে ভক্ত মকর সংক্রান্তির দিনে রাত ১২টার পর দুমুঠো মাটি দেবে তার মনস্কামনা পুরন হবে।

৫০০ বছরের সেই প্রথা আজো চলছে। তুলসী মঞ্চে মাটি দেবার ফলে আজ তিনতলা সমান উঁচু হয়েছে।ভক্তরা কেলেঘাই নদীতে স্নান করে ভিজে কাপড়ে দু মুঠো মাটি তুলসী মঞ্চের গোড়ায় দেন। ভিজে কাপড়ে ওঠার জন্য জায়গাটা পিচ্ছিল। পিছল জায়গায় সবাই উঠতে পারেনা। অর্ধেক উঠে পিছলে আবার নিচে নেমে আসছে। যারা পারছে তারা ওপরে, যারা পারছেনা তারা নিচে মাটি দিচ্ছেন।

মেলাটি কেলেঘাই নদীর চরে প্রায় ১৯/২০ একর জুড়ে বসে। আগে মেলা পৌষ সংক্রান্তির দিনে হতো। এখন ১৫- ১৬ দিন ধরে চলে। মেলাতে আপনি যা চাইবেন তাই পেতে পারেন। যেন গরিবের শপিং মল। সস্তায় জিনিস পত্র পাওয়া যায়। আশেপাশের জেলা থেকে বহু মানুষ কেনাকাটা করতে আসে। তুলা, মাদুর, মাটি ও লোহার জিনিস, শঙ্খ, মনিহারি, শাক সবজি,

মাছ, মাংসও পাওয়া যায়। খাবারের দোকানে ভাত ডাল থেকে চাইনিজ, মোঘলাই। সেলুন, জুতো দোকান ও সারানো সব মিলবে। একদিকে পাখির কেন বেচার সম্ভার। নদীর সাঁকোর দুই পার জুড়েই মেলা চলে। দুই মেদিনিপুরের এই প্রাচীন বিখ্যাত মেলায় চাইলে আপনিও আসতে পারেন। পটাশ পুর থেকে বাসে এলে বা বাস রাস্তার পর দশগ্রাম থেকে আসা যায়। বালিচক থেকেও দশগ্রাম আসার পর এই মেলায় আসতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.