বিশেষ রচনা- স্মৃতিতে অনাথবান্ধু
ভুবন মোহনকর: ০২/০৯/২০২২: স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনা শহীদ অনাথবন্ধু পাঁজা। অনাথবন্ধু পাঁজার জন্ম (২৯ শে অক্টোবর, ১৯১১) মেদিনীপুরের জেলার সবং-এর জলবিন্দু-হরিরহাট গ্রামে। তাঁর পিতার ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ পাঁজা। অনাথের তিন বৎসর বয়সের সময় তার পিতা মারা যান। তার মা কুমুদিনী দেবী ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তাকে প্রতিপালন করেন।
তিনি প্রাথমিক পাঠ গ্রামের পাঠশালায় শেষ করে মায়ের সঙ্গে মেদিনীপুর শহরে যান এবং সুজাগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক কারণে পড়াশোনা আর করতে পারেন নি। তিনি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগ দেন এবং দলের নির্দেশে ও সহযোগিতায় প্রথমে মেদিনীপুর টাউন স্কুল এবং পরে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ভরতি হন। এবং সেখান থেকেই পরাধীন ভারতের মুক্তির জন্য দেশ সেবায় মনোনিবেশ করেন। গোপনে রিভলভার চালানো, লাঠি খেলায় প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। তাঁর কাছে বন্ধু মৃগেন দত্ত। যিনি মেদিনীপুরের আরো এক অন্যতম শহীদ।
পরাধীন ভারতে অখণ্ড মেদিনীপুরের শাসক ছিলেন বার্জ। অত্যাচারিত বার্জের হাত থেকে মেদিনীপুরের মুক্তি চাই চাই, এই ব্রতয় ব্রতী হন কিশোর অনাথবন্ধু। সেইমত ১৯৩৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর তিনি এবং মৃগেন দত্ত অত্যাচারিত বার্জ এর ওপর আক্রমণ করেন এবং হত্যা করেন। সেও এক ধুন্ধুমার কান্ড। দিনটা মেদিনীপুর বাসীর কাছে সজোসাজো রবে মুখরিত ছিল। মেদিনীপুর কলেজ মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং-এর বিরুদ্ধে মেদিনীপুর ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে নামেন শেতাঙ্গ বার্জ ও শেতাঙ্গ সঙ্গী রা। মেদিনীপুরের হয়ে মাঠে নামেন মৃগেন দত্ত, অনাথ বন্ধু, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন প্রমুখ। খেলা প্রাকটিসের ছল করে, মাঠেই দুই বন্ধু বার্জ সাহেবকে আক্রমণ করলে তিনি মারা যান। জোন্স নামে একজন আহত হন। পুলিস প্রহরী দুজনের উপর পাল্টা গুলি চালায়। এতে তারা দুজন সেখানেই নিহত হন এবং অপর সঙ্গীরা পলায়ন করতে সক্ষম হন। পরে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বাকিদের করো জেল করো দ্বীপান্তর ঘটেছিল।
আজ ২রা সেপ্টেম্বর ২০২২! সবং তথা মেদিনীপুর জেলার গর্ব শহীদ অনাথবন্ধু পাঁজার ৮৯তম শহীদ দিবসে অখণ্ড মেদিপুরের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য।