Sunday ট্যুর ট্রিপ ( গন্তব্য বেলপাহাড়ী ও ঝাড়গ্রাম)🖋️ভুবন মোহনকর
কাছে না দূরে, দূরে না কাছে… করোনার ভয় এড়িয়ে কোথায় যাওয়া যেতে পারে ভাবতে ভাবতেই ঘুরে আসুন বেলপাহাড়ি। সুন্দর জঙ্গুলে রাস্তা দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়। চোখ টেনে নেয় দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ আর হলুদে মেশানো ধানখেত। গন্তব্য হতে পারে ঘাঘরা জলপ্রপাত।
শীতকালে এখানে জল কম থাকে বলে জলপ্রপাতের শোভা অতটা বোঝা গেল না। তবে বর্ষায় এই অঞ্চল কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে। তবে জলের স্রোতের চেয়েও এখানে যেটা বেশি আকর্ষণীয় সেটা হল জলপ্রপাত সংলগ্ন প্রস্তর খণ্ডের আকার। দেখলাম বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। সম্ভবত জল আর হাওয়ার ঘর্ষণে এরকম আকার হয়েছে। বর্ষাকালে এই গর্তগুলোও মুখ পর্যন্ত জল ভরে থাকে।
দেখে মনে হয় জল ভর্তি ঘড়া। আর এই থেকেই ঘাঘরা জলপ্রপাতের নামকরণ হয়েছে। এবার ফেরার পালা। ঠিক করলাম কাঁকড়াঝোড় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ফিরতে পারেন। কাছেই সুবর্নরেখা নদী। সেখানে রয়েছে বিখ্যাত মানুষ বিভূতিূষণ বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ি। যদিও বাড়িটা ওনার স্ত্রীর নামেই “গৌরিকুঞ্জ”।সুবর্ণরেখা নদী দেখে ফেরার পথে দুয়ারসিনি বলে একটি জায়গায় যেতে পারেন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ এই অঞ্চলটিকে পর্যটকদের উপযোগী করে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন।
এখানে তাঁরা একটি সরকারি পর্যটন নিবাস তৈরি করেছেন। তবে ভাইরাস সংক্রমণের জন্য এটি বন্ধ আছে। এখানে মা দুয়ারসিনির মন্দির আছে। এছাড়াও, ঝাড়গ্রাম শহর হয়ে ফেরার পথে যেতে পারেন ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িযাখানায় দেখতে পাবেন নানা ধরনের পাখি, ময়ূর, মূল আকর্ষণ চিতা বাঘ, নীল গাই, জঙ্গলের হাতি, হরিণ, বা৺দর এবং জঙ্গলে পাওয়া নান রকম সাপ। এখানে বোটিং করতে পারেন। শাল, সেগুন, মহুয়ার জঙ্গলে একটু শান্তিও পাবেন। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি রয়েছে প্রাচীন রাজবাড়ি। ঝাড়গ্রামের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। টলিউডের বেশিরভাগ শুটিং এখানেই হয়। যদিও করোনা র পর এখানে প্রবেশের বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ হয়েছে। ইতিহাস ঘেঁটে জন যায়, সম্রাট আকবর রাজা মান সিংকে বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার সুবেদারী প্রদান করলে বাংলা জয় করতে আসেন। তিনি স্থানীয় আদিবাসী রাজাদের পরাজিত করেছিলেন যারা এই অঞ্চলে শাসন করছিলেন যা জঙ্গলখণ্ড নামে পরিচিত। আজও এই বিজয়কে স্মরণ করতে প্রতি বছর বিজয়াদশমীর দিনে উপজাতীয় রাজার মূর্তি তৈরি করা হয় এবং প্রতীকীভাবে বধ করা হয়। ৮ (আট) মহল রাজার সাথে রাজাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। এই প্রথাটি রাজা নরসিংহ মল্ল দেব দ্বারা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছিল যখন ২০ শতকের গোড়ার দিকে ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ রাজপরিবারের রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি হল বিশাল ইতিহাস এবং মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মিশ্রণ যা পর্যটকদের দীর্ঘকাল ধরে মুগ্ধ করে আসছে।
এটি সন্ন্যাসী রাজা, টিনটিরেত্তর-যিশু, দুর্গেশগারের গুপ্তধন ইত্যাদির মতো অনেক বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্রের শুটিং লোকেশন। কানকদুর্গা মন্দির, চিল্কি গড় ঝাড়্গ্রামের শহর থেকে ১৮ কিমি পশ্চিমে এক সুরম্য অরণ্যাণীর মধ্যে চিল্কিগড়ের কনকদূর্গা মন্দির । বহু ইতিহাস মন্দিরের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ।লোকালয় বর্জিত মন্দিরের চারিদিকে ৩৬৫ প্রজাতির বৃক্ষ ও লতাগুল্ম রয়েছে ।বর্তমানে এটি জেলার একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র । দেবীর স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে ১৭৪৯ সালে তৎকালীন রাজা গোপীনাথ সিংহ মওগজ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । কিংবা বলা চলে রাজকাহিনীর আড়ালে রাজনীতি। স্বপ্নাদেশের গল্পে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা। ঝাড়গ্রামের কনক দুর্গা মন্দিরের অন্দরে নানা গল্পকথা। এছাডাও ঘুরতে যেতে পারেন ক্রিস গার্ডেন কয়েকশো প্রজাতির গোলাপের বাগান।
কিভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে খড়গপুর লোকাল ট্রেন বা ঝাড়গ্রাম লোকাল ট্রেন বা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে যাবেন, সেখান থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন, এছাড়াও মেদিনীপুর থেকে বাসে করে ঝাড়গ্রাম বাসে করে যেতে পারেন। এছাড়াও সেক্টর ৫, ধর্মতলা, প্রেস ক্লাব বা হাওড় থেকে ডাইরেক্ট SBSTC বাস পাবেন ঝাড়গ্রাম যাওয়ার বাস পাবেন।
কোথায় থাকবেন?
ঝাড়গ্রাম শহরে থাকার জন্য ছোট বড় হোটেল, লজ পাবেন, আর যদি ভাবেন জঙ্গলে রাত কাটানোর অ্যাডভেঞ্চার এর মজা নেবেন তাহলে শিলদা, বেলপাহাড়ি তেও থাকতে পারেন, সরকারি হোম স্টেও গুলোতে ও থাকতে পারেন।