গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো চালু হতে চলেছে
গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো চালু হতে চলেছে। যাত্রাপথে যাত্রীতদের জন্য থাকছে আলোর খেলা। সে এক অন্য অনুভূতি।
বহু প্রতিক্ষার পরে চালু হতে চলেছে গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো। কল্পনা করলে রোমাঞ্চিত হতে হয় যে, আপনার মাথার উপর থেকে বয়ে যাবে গঙ্গা আর আপনি সেই টানেলের মধ্যে দিয়েই পৌঁছে যাবেন হাওড়া। মেট্রো কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যাচ্ছে,এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে এই যাত্রা পথে থাকতে পারে আরো চমক। গঙ্গার নিচে দিয়ে যখন ট্রেনটি যাবে, তখন সেখানে এমন কিছু লেজার শো এবং সাউন্ড এফেক্ট ব্যবহার করা হবে যাতে আপনার মনে হবে আপনি সম্পূর্ণ জলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করছেন। বিশ্বের বহু দেশে এমন নদী সমুদ্রের নিচ দিয়ে আলোর খেলা দেখানো হয়।
কোলকাতা মেট্রোর এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, নদীর উপরের জলস্তর থেকে ৩৩ মিটার নীচে তৈরি হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গ। নদী খাতের থেকে আরও ১৩ মিটার গভীরে পলিমাটির ভিতর দিয়ে গিয়েছে সেগুলি। আর সেই জোড়া সুড়ঙ্গের পেট চিরে ছুটবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। তবে জলের মধ্যে থেকে কিন্তু সুড়ঙ্গ নেই। রয়েছে নদী খাতের পলিমাটির মধ্যে। অর্থাৎ, মেট্রোযাত্রীদের মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাবে গঙ্গা।
সেই জার্নিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা রকম আলোর সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। সুড়ঙ্গের যে অংশ নদীর নীচে দিয়ে যাবে, ওই অংশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নীল আলো। ওই অংশের জন্য এ ছাড়াও আরও একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের। পৃথিবীর বহু দেশে সমুদ্রের জলের গভীরের দুনিয়া দেখাতে স্বচ্ছ কাচের সুড়ঙ্গ রয়েছে। সেখানে এক বার ঢুকে পড়লে চারপাশ বিরাট অ্যাকোয়ারিয়ামের মতো মনে হয়। টিকিট কেটে অনেকেই সে সব দেখতে যান। এখানে অবশ্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
তবে যাত্রীদের একটা অনন্য অনুভূতি দিতে চলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রেও নদীগর্ভের ৫২০ মিটার সুড়ঙ্গ পথে যাত্রীদের তেমন অনুভূতি দেওয়ার কথাই ভাবছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নদীর নীচে থাকা সুড়ঙ্গ পথে নীল রঙের এলইডি আলো বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ট্রেনে ওই পথ পেরোতে ৮০ সেকেন্ডের মতো সময় লাগবে বলে মেট্রোর রেলের তরফে জানানো হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, সমস্ত সুরঙ্গে সাদা আলো থাকলেও পশ্চিম দিকের অর্থাৎ হাওড়ার ডিআরএম ভবন সংলগ্ন অংশ থেকে পূর্ব দিকের স্ট্র্যান্ড রোড পর্যন্ত অংশের জোড়া সুড়ঙ্গে ওই নীল রঙের আলো বসেছে। অবশ্য এর আগে নদীর নীচে সুড়ঙ্গ শুরু এবং শেষ হওয়ার অংশে তথ্য সংবলিত বোর্ড বসানো হয়েছে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ চাইছেন, নদীর নীচে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কৃতিত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি, গঙ্গা নদী পেরোনোর রোমাঞ্চকর অনুভূতি যাত্রীদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে। তাই নানা বিশেষ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা বলে মেট্রো সূত্রের খবর।
এছাড়াও আছে বিশেষ আবহ সংগীতের ব্যবস্থা। জানা গিয়েছে জলের নীচের আবহ তৈরি করতে বিশেষ বাদ্যসঙ্গীত এবং লেসার প্রযুক্তির আলো ব্যবহার করা হতে পারে। সে জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। গঙ্গার নীচ দিয়ে যাওয়া সুড়ঙ্গকে যাত্রীদের সামনে আর কী কী ভাবে তুলে ধরা হতে পারে এখন পর্যন্ত তা জানানো হয় নি ।
যাত্রী পরিবহণ শুরু করার লক্ষ্যে বকেয়া কাজ শেষ করতেই মনোনিবেশ করা হচ্ছে। কারণ, তার পরেই রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের ছাড়পত্র মিলবে। তাই সেই বিষয়েই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা। তবে আশা করা যায়, গঙ্গার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীরা এক অনন্য অনুভূতির সাক্ষী থাকবেন।