অফবিটসাহিত্য ও সংস্কৃতি

বসন্ত পঞ্চমী উৎসবের অজানা কথা ও বিদ্যা ও শিল্পের দেবী সরস্বতী পুজোর নানা ইতিহাস — শ্যামাপদ প্রামাণিক

প্রসঙ্গ: বসন্ত পঞ্চমী উৎসবের অজানা কথা ও বিদ্যা ও শিল্পের দেবী সরস্বতী পুজোর নানা ইতিহাস

শ্যামাপদ প্রামাণিক: ঘাটাল মহকুমার ৫টি ব্লকে বসন্ত পঞ্চমী উৎসব ও বিদ্যা,শিল্পের দেবী সরস্বতী দেবীর আরাধনা মহাসমারোহে হয়। শুধুমাত্র ঘাটাল মহাকুমাতেই নয়। সারা রাজ্য ছাড়াও প্রতিবেশি রাজ্য ঝাড়খণ্ড বাংলাদেশে,উত্তর ভারত,ওড়িশা, নেপাল

 

বসন্ত পঞ্চমী উৎসব ঘটা করে হয়। এই পুজো শুধু এইসব স্থানে কেন? এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কেন? এমনকি পশ্চিম ও মধ্য ভারতের জৈন ধর্মাবলম্বীরা এই পূজা করেন।এই দিনে বাংলা র ঘরে ঘরে, স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট বড় ক্লাবে সর্বজনীন রূপে আবার কোথাও কোথাও দু,’চার যুবক রাতারাতি কোন রাস্তার ধারে ক্লাব ঘর গঠনের উদ্যোগ নিয়ে বাগদেবী সরস্বতী আরাধনায় ব্রতী হয়।

বসন্ত পঞ্চমী কী?

————————–

মাঘ মাসের শুল্কা পক্ষের পঞ্চমী তিথি বা দিনটি বসন্ত পঞ্চমী তিথি। অবশ্য শীত যাই যাই করে এদিনই বসন্তের আগমণ ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে। এই বসন্ত তিথিতেই বাগদেবী সরস্বতী পুজো হয়।‌ বলাই বাহুল্য রীতি অনুসারে মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথি আর বসন্তের আগমণ।এই দুই মিলে এর অন্য আরেক নাম বসন্ত পঞ্চমী।

 

সরস্বতীর আবির্ভাব ও পুজোর প্রাচীন ইতিহাস

——————————————————————

পুরান থেকে জানা যায় শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিনে ব্রহ্মার মুখ থেকে সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব ঘটে । ঋকবেদে সরস্বতী একজন দেবীরূপে বর্ণিত আছে । সেই প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে সরস্বতী হিন্দুর অন্যতম দেবী হিসেবে মর্যাদা পান ও পূজিত হন। সরস্বতীর রূপকল্প বর্ণনায় পুরাণে উল্লেখ আছে কোথাও দ্বিভুজা কোথাও চতুর্ভূজা এই দুই হাতেই পূজিত হন ।দুই হাতে বীণা, পুস্তক থাকে চতুর্ভুজের চার হাতে কলম বীণা পুস্তক ও অক্ষরমালা থাকে। শাস্ত্রীয় প্রথা আচার বিধি মেনে এই পুজো হিন্দুরা জাঁকজমকে করে । হিন্দুর বারো মাসে তেরো পার্বণের এটি বিশেষ আরেক পার্বণ বলে প্রচলিত।

 

বৈদিক দেবী হলেও প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী দেবী বাগেশ্বরী আরাধনাও করতেন।

উনবিংশ শতাব্দীর পাঠশালায় শিক্ষারকালে প্রতি মাসে শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে নতুন চৌকিতে শালপাতার তাড়ি, দোয়াত কলম পূজা করার রীতি প্রচলিত ছিল। বিংশ শতাব্দীতে এই পুজো ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। এই পুজো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়। সরস্বতী বিদ্যার ও শিল্পকলার দেবী। স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা হলুদ পাঞ্জাবী ও মেয়েরা হলুদ বা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরিধান করে বিদ্যা ও শিক্ষালাভের আশায় দেবীর আন্তরিক ও নিষ্ঠা সহকারে পূজা করে অঞ্জলি দেয়। শিল্পীরা দেবীর কাছে শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা দেবীর কাছে প্রার্থনা জানায়। ভাস্করা এদিন শিল্পের সূ‌চনা করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বিদ্যারম্ভের কথা উল্লেখ আছে। তাই আবার ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে খড়ি দিয়ে শিক্ষার সূচনা করেন অভিভাবক অভিভাবিকা এই বিদ্যার দেবীর কাছে।। পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারণের পর শিশুর হাতে খড়ি দিয়ে সিলেটে একটি অক্ষর লিখে তার শিক্ষার সূচনা করেন। শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পূর্বে শিল্পের দেবীকে প্রণাম করে শুরু করেন। এই পুজোর এক লোকাচার আছে ।স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সরস্বতী পূজার আগে কুল খায় না। পুজোতে দেবীকে কূল নিবেদন করে তারপরে তারা খায়। এই প্রথা আজও প্রচলিত আছে। দেবীর কাছে পুজোর জন্য ছাত্রছাত্রীরা তাদের বই কলম ,খাতা দেয় ।শিল্পীরা দেবীর কাছে বাদ্যযন্ত্র পুজোর জন্য দিয়ে থাকে। পুজোর দিন ছাত্র-ছাত্রীদের লেখালিখি করা নিষিদ্ধ। পুজোতে হলুদ রঙের প্রাধান্য বেশি থাকে। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল , গাঁদা ফুলের মালা, হলুদ চন্দন হলুদ বা বাসন্তী রঙের শাড়ি ইত্যাদি। এই পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ও স্কুলে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বর্তমানে কোথায় আবার সরস্বতীর ছোট বড় থিমের মণ্ডপে পূজো হয়। বাঙালির অন্য পুজোর মতো বসদন্ত পঞ্চমীর সরস্বতী পুজো ব্যাপক আনন্দ হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.